

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।একসময় সরকারি দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই অভিজ্ঞ নেতা দীর্ঘদিন পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি বিএনপির অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে ‘লক্ষ্মী আসন’ নামে পরিচিত। কারণ যে দল এখান থেকে জয় পেয়েছে, সাধারণত সেই দলই সরকার গঠন করেছে। তাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উখিয়া–টেকনাফ আসন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা চলছিল।
দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পছন্দে উঠে আসে শাহজাহান চৌধুরীর নাম। সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের সময় তাঁর নাম ঘোষণা করেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এটি কক্সবাজার-৪ আসনের জনতার বিশ্বাসের প্রতিফলন। আমি দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের ভালোবাসায় ঋণী। আমাদের ঐক্যই হবে ধানের শীষের বিজয়ের চাবিকাঠি। কেউ যেন উল্লাসে মেতে না ওঠে, আতশবাজি না ফোটায় কিংবা বিভাজন সৃষ্টি না করে, কারণ ব্যক্তি নয়, দলই আমাদের শক্তি।
১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করে শাহজাহান চৌধুরী রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন চট্টগ্রাম-১৮ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে সরকারি দলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯১, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে আটবার প্রার্থী হয়ে চারবার নির্বাচিত এই নেতার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় উখিয়া কলেজ,যা বর্তমানে এলাকার উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে উখিয়া–টেকনাফ অঞ্চলে নতুন সড়ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত।
এবারের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী এবং সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। তবে অভিজ্ঞতা, ত্যাগ ও সাংগঠনিক গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত শাহজাহান চৌধুরীকেই বেছে নিয়েছে দল।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে উখিয়া–টেকনাফে বিএনপি আবারও মাঠে ফিরে এসেছে। দলের প্রতিটি কর্মী এখন ঐক্যবদ্ধ। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই কাজ করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তঘেঁষা উখিয়া–টেকনাফ এখন শুধুই একটি আসন নয়, বরং বিএনপির ঐক্য ও কৌশলগত রাজনীতির পরীক্ষাক্ষেত্র। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী নেতারা যদি ঐক্য ধরে রাখতে পারেন, তবে এই আসনটি আবারও হতে পারে বিএনপির জয়ের প্রতীক,এক কথায়, লক্ষ্মী আসন’-এর ভাগ্য এবারও ধানের শীষের দিকেই ঝুঁকছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

পাঠকের মতামত